ভাষা শহিদের দেশে নিভৃত নীলপদ্ম
মানুষের ঘামে ভেজা ক্ষেত, মাটির দিকে তাকাও
ফসলের শীর্ষেও জল্লাদের হাত
ভিমরুলের চাক ভাঙা
পৃথিবীটা ছদ্দবেশী প্রাগৈতিহাসিক অর্ধমানবের রণক্ষেত্র
শিকড়ে বাকড়ে আটপৌরে সঙ্কেত পাঠায় কেউ
স্থাপত্য ভাস্কর্য শিল্প চিত্রকলা নিরবচ্ছিন্ন আব্রু ধরে রাখে
নীরবে কান পেতে আছে ইতিহাস চেতনা
ভালবাসা দু’বাহুতে জড়ায় আলো জল বাতাস
ছদ্দবেশে কে গো ? মুত্থরমুত্থ চৈতন্য গড়ায়
অনিঃশেষ চলা । খেয়াঘাট, তরী ভেসে আছে
কীর্তন, বিভাস, বসন্ত, ঘাটু , বাউল, সুহিনী, মিশ্রখাম্বাজ
রাগিণী ও তাল
নক্সীকাঁথা বুনছে রাজা
লুটোপুটি খায় তরুপের তাস
রৌদ্রছায়া, পলাশ শিমূল গোলাপ কৃষ্ণচূড়া ফুটছে আরশিনগর
বর্ণমালার মেঘ জল পবনকথা শুনে
আয়ুষ্মান উনিশের গান গায় শহিদের দেশ
অমোঘ, ধুলবালি,দহন,খননের স্পৃহা
তপনতাপে জেগে ওঠে শ্মশান
শহিদ মিনারে মানুষের ঢল
সূর্যের গান গাওয়া । সম্মোহনে মায়ারূপী দিব্যজ্যোতি আগুন
আগুনে কী নেই ?
গাই ভাষাশহিদের জয় গান
ধ্বনি শুনলেই খুঁজে পাই বর্ণমালা । শব্দের স্নায়ু দেয়ে যায় কবিতার ডাকহরকরা । পৃথিবীর জন তেপান্তরে মানুষ কেন আছাড় খায় বর্ণমালাসমেত । এই বর্ণমালা- অগণিত মানুষের । এবং মানুষের মনুষ্যত্বের যাবতীয় পুঁজি । ভাষার প্রশ্নে সুগন্ধী গোলাপ ও জলন্ত মশাল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া । প্রেমিক ও প্রতিবাদীর ভূমিকায় অন্তর্নিহিত ভাষা, অনুশীলন ও অর্জনের দৃপ্ত সংস্কারে । বরাক উপত্যকার
ভাষাশহিদের স্মৃতিতে মাতৃভাষার পতাকা হাতে যারা এগিয়ে চলেছি, আমাদের বিশ্বাস, একদিন নবপুরাণ লেখা হবেই । আমাদের রয়েছে অখণ্ড, অবিভাজ্য এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার । প্রণাম ভাষা-জননীরে । গাই ভাষাশহিদের গান । জয়গান । আমরা সবাই জানি, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না ।
আত্মপরিচয়ের বর্ণমালা
কেন কেবলই ভয়, অনিশ্চয়তা
স্বদেশের মানচিত্রে এ কোন বিপন্ন ভূগোল
এখানে ওঠে প্রতিদিন নতুন সূর্য
অন্তর্গত চেতনায় ভাষা শহিদের দেশে
ফুলেরাও কাঁদে, জ্বলে ওঠে কবিতা
বঙ্কিম,রবীন্দ্রনাথ,নজরুল, জসিম, জীবনানন্দের ভাষা
শরবিদ্ধ বর্ণমালা । মেঘমালা, এ আলোর লন্ঠন
হাজার হাজার তার আয়ুষ্কাল, অগণিত কর্মশালা
উনিশে মে সুরমা বরাকের জারি জারি ভাটিয়ালি
চড়কের লোককথা । হাতে হাতে জ্বলছে মশাল
মায়ের বুকে বহ্নিমান সন্তানের চিতা
যুদ্ধে আর রক্তের নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে
ভেসে যায় অমর উনিশের ভেলা
অশ্রু আর আগুনের সহজপাঠ
কোথায় কোথায় বাঁক নেবে
আর কত লোকক্ষয়
মায়ের তপ্ত বুকে গড়িয়ে পড়ে
বর্ণমালার অশ্রুজল
আত্মপরিচয় ।
নব পুরাণ কথা
একটা দেশের মানুষ ভাষার জন্য কাঁদে
গুন গুন সারে পাগলা ভ্রমর
এখানে বকুলের মালা নেই
পদ্মাপুরাণ পড়ে লৌকিক পৃথিবী
লৌহবাসর হাসে অট্টহাস্য
টুটা ফাটা মানুষ জাগরণ চায়, যুদ্ধ নয়
মাতৃভাষায় কথা বলে পৃথিবী।
যেসব গান প্রত্যেক মানুষের বুকে থাকে
যে পংক্তিগুলি নাম আলো করে দেবে
নিবিড় করে জন্ম নেয় নতুন দিনগুলি
স্বপ্ন-ভ্রূণ, সরোবরে পদ্ম, ভ্রমর । প্রত্ন-তত্ত্বচিহ্ন
পবিত্র মেঘ, ভাঙা মানুষ,
চাঁদ ওঠে না । দুয়ার ভরা কোলাহল
কদমফুল ফুটে রয়েছে ।
পৃথিবীর মাতৃভাষা
পদাতিকের ধুলি অঙ্গে এগিয়ে যায় মিছিল
শহিদ তোমরা অমর রহো...
মহামানবের আত্মবলিদান বৃথা যায় না ... ...
ধ্বনিত হয়
জান দেব, তবু জবান দেব না
মাতৃভাষা জিন্দাবাদ
মিছিল মিছিল মিছিলের ধুলো
ভাষার জন্য একটি উপত্যকা কাঁদে
ভালবাসার জন্য
বরাক কুশিয়ারা বুড়িগঙ্গা
কাঁদে ভীষণভাবে
কাঁদে বঙ্গভূমি, জননী জাহ্নবী
কাঁদে শস্যশ্যামলা বসুন্ধরা
সুরমা কুশিয়ারা মিশে যায় বঙ্গোপসাগরে
গঙ্গা ছুটে চলেছে
বরাকে ধামাইল চড়কের নাচ
জারি সারি ভাটিয়ালি উনিশে মে-র আত্মগাথা জলের বুকে
১৯শে মে নদীর মধুর চলা
ঝরণা যেমন গান গায়
জেলেদের ডিঙ্গি নৌকা
গুনগুন করে গান গাওয়া
বর্ণমালা
মাতৃভাষার গান
১৯শে মে, ২১শে জুলাইর আত্মকথায়
উপকথা বলছে পৃথিবী
শিউলিফুলে ভরে আছে গাছতলা
ফুল কুড়ায় গুন গুন স্বরে মানুশেরা, জন্মে শালুক
বিলে শাপলাশালুক আর সূর্য ওঠা দেখো
যেন গঙ্গোত্রী থেকে আরও দূরে
গঙ্গার উৎস এক আশ্চর্য হিমবাহ
গোমুখ, এখানে থাকা যায় না
তুষারশৃঙ্গগুলি থেকে গড়িয়ে পড়ছে সঙ্গীত
নিরুদ্দেশে আলোর আভাস
চাঁদের আলোয় পথ ফুরোয় না
মাতৃভাষার বন্দনায় পদাবলীর মত
বিলজুড়ে ফুটে আছে অসংখ্য পদ্ম
অপূর্ব রূপ গন্ধ
এর পাশে সূর্যোদয় সবচেয়ে সুন্দর !
সূর্য না ওঠা পর্যন্ত রঙের এই হোলি খেলা
এ দিনও না রাতও না
দিন রাত্তিরের মোহনা
বিলে পদ্মফুল আর সূর্য ওঠা দেখো
পৃথিবীর মাতৃভাষা
জ্যোৎস্না ধুইয়ে যায় সারা উপত্যকা
ফুলেরাও তাই তোমাকে ভালবাসে
নদীরা বড় কাঁদে
শহিদ মায়ের মত
সমুদ্রের মত নিজস্ব গান
নদীর মত গান
অন্তর্গত ভাষায় আগুনের সহজপাঠে
সুলুকসন্ধান জানে যে
জানে বরাভয় কাকে বলে
নবতর জন্মের খোঁজে
যে লেখে ভাষার পদাবলী
যাদের ভেতরে অন্য স্রোত, অন্য গতিপথ
অঙ্গীকারের আলো জ্বালায় কারা
বাতাসে কীসের আহ্বান
সমুদ্রে জেগে থাকে যেভাবে বাতিঘর
এ নদীর চলা মোহনায়
জল ঠিক পথ খুঁজে নেয়
ওই সাগরের নীল... ...
ভেসে আসে সাগরের গান
চারনেরা ধরেছে গান
বরাকের বুকে ভাটিয়ালি গান, রক্তলেখা
প্রাগৈতিহাসিক যুগের উপকথা
বাংলা ভাষা জিন্দাবাদ । জিন্দাবাদ
এ কোন বরাক ? ভাষা শহিদের গাও জয়গান
মাতৃভাষার বন্দনায় হেঁটে যায় পৃথিবী
সজারুর মত বেঁচে থাকে কবিরা
দু’হাত তুলে সামনে দাঁড়াও
জানায়, নিয়তির মত জল্লাদ
নদীতে বহমান স্রোত । ভাগ্যবিধাতা কারা ?
কোথাও রয়েছে ক্ষমা, ললিত কুঠুরি
স্বজনের ভালভাসাহীনতার পাপ
স্তোকবাক্য ।
সহজপাঠে এভাবেই সফলতা ব্যর্থতার কাঁধে মাথা রাখে।
যাদের ভেতরে অন্য স্রোত, অন্য গতিপথ
এসো, অন্ধকার ভেঙে পণ্য নিয়ে যাই
স্রোতের বিরুদ্ধে যে দাঁড় টানে
তার হাতে শক্ত হাল
জানে কোথায় গুপ্তচড়া
তবু তরী টাল খায়
কত ঢেউ যে বয়ে গেল
নদীর বুকে যে বেড়ায় টের পায়
তার শরীরের ফাঁকে ফাঁকে হাওয়ার শব্দ
দিনবদলের বিশ্বাসে মাতৃভাষার লাবণ্যে
হারিয়ে যাওয়া ভালবাসার এক নদী নিভৃতে ঘরে ঢোকে
গাঁয়ের উঠোনে উলঙ্গ শিশু, কৃষক রমণী । ধানের শিষে আলো
ভাষার শরীরে গর্ভিণী জুমধান- ভাসান
বরাকের পদাবলী লেখে চারণেরা
প্রাণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখার উপায় নেই
জীবন আর শপথের জীবাশ্ম দেখে প্রত্নতাত্ত্বিক
মানুষের কাছে
প্রাণের সহযোগে কোনও কিছু উজ্জ্বল করে রাখে
সঙ্গীত, ভাষা, কাব্যকলা।
সময়ের পথে পথে মানুষকে নিয়ে হাঁটে
পুরাকীর্তি, স্থাপত্য- ভাস্করজ,স্স্মৃতিস্তম্ভ, গম্বুজ-খিলান
ভোরের নদীতে সূর্যোদয় দেখে
যেমন চোখ মেলে চায় অসংখ্য ধানেরফুল কচুরীপানা ধনচে গাছ
জীবনের পরমায়ু জুড়ে ষড়ঋতুর সমাহারা
মণিমাণিক্যের পাথুরে খনি ভাষার পালতোলা নাও ।
ভালবাসার লাবণ্য
আলোর পথ পেয়ে ঠিকানা খুঁজে নেওয়া
মানবের ভেতরে ছাপোষা ঈশ্বর
যুদ্ধের ক্লান্তির শেষে বোঝা যাবে দুরন্ত লোকক্ষয়
অব্যক্ত রৌদ্রের মত আম-জাম-জামরুলের শিমুলের ফুটে ওঠা
উপকণ্ঠ শিলচর
সহসা কোকিল ডেকে ওঠে
আগুনলাগা কৃষ্ণচূড়া বন
সম্বৎসর সজাগ শহিদবেদি প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতি
রৌদ্র কুড়ায় গুন গুন পাগলা ভ্রমর
জগৎজোড়া মতিভ্রমে
অরূপ বাঁশি লুটিয়ে কাঁদে
কীসের জন্য ?
শূন্য হাতে যে করে ঘর, অসীম করে তারই সন্ধান ।
প্রজাপতির মত জ্বলজ্বল করে দূরান্তের নক্ষত্ররা
প্রণয়ের মজবুত বাঁধ ভালবাসা ছাড়া কেউ বোঝে না
বনানীর তন্ময়তা
জানে সালোক সংশ্লেষণ
দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত অমৃতস্য পুত্রা
বোঁটা থেকে খসে পড়বে বলেই
সুসময়ে পেকে যাওয়া ফসলের অঘ্রাণ
তোমাকে নিয়েও পরিভ্রমণে মাতৃভাষার সবুজেভরা পৃথিবী
আমার কুশিয়ারা কলংমার কূলে হাজির অশ্বমেধের ঘোড়া
জাহ্নবীর আনাগোনা
আগামী পৃথিবীর গান ।
মাতৃভাষা
এমন সময় কেমন আছে সে
যে আমাকে বাউল বানিয়েছে-
মায়ের কথায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়
বাঁধা নৌকা ছুটে যায়
নদীর উচ্ছাসে হয় শ্রুত
ঊনিশ আর একুশের রক্ত গান গেয়ে ওঠে ।
একুশের কথা বলছে ওই ভোরের শিশির
ঊনিশের কথা বলছে ভোরের আকাশ,বাতাস,সবিতা ।
মানুষের ঘামে ভেজা ক্ষেত, মাটির দিকে তাকাও
ফসলের শীর্ষেও জল্লাদের হাত
ভিমরুলের চাক ভাঙা
পৃথিবীটা ছদ্দবেশী প্রাগৈতিহাসিক অর্ধমানবের রণক্ষেত্র
শিকড়ে বাকড়ে আটপৌরে সঙ্কেত পাঠায় কেউ
স্থাপত্য ভাস্কর্য শিল্প চিত্রকলা নিরবচ্ছিন্ন আব্রু ধরে রাখে
নীরবে কান পেতে আছে ইতিহাস চেতনা
ভালবাসা দু’বাহুতে জড়ায় আলো জল বাতাস
ছদ্দবেশে কে গো ? মুত্থরমুত্থ চৈতন্য গড়ায়
অনিঃশেষ চলা । খেয়াঘাট, তরী ভেসে আছে
কীর্তন, বিভাস, বসন্ত, ঘাটু , বাউল, সুহিনী, মিশ্রখাম্বাজ
রাগিণী ও তাল
নক্সীকাঁথা বুনছে রাজা
লুটোপুটি খায় তরুপের তাস
রৌদ্রছায়া, পলাশ শিমূল গোলাপ কৃষ্ণচূড়া ফুটছে আরশিনগর
বর্ণমালার মেঘ জল পবনকথা শুনে
আয়ুষ্মান উনিশের গান গায় শহিদের দেশ
অমোঘ, ধুলবালি,দহন,খননের স্পৃহা
তপনতাপে জেগে ওঠে শ্মশান
শহিদ মিনারে মানুষের ঢল
সূর্যের গান গাওয়া । সম্মোহনে মায়ারূপী দিব্যজ্যোতি আগুন
আগুনে কী নেই ?
গাই ভাষাশহিদের জয় গান
ধ্বনি শুনলেই খুঁজে পাই বর্ণমালা । শব্দের স্নায়ু দেয়ে যায় কবিতার ডাকহরকরা । পৃথিবীর জন তেপান্তরে মানুষ কেন আছাড় খায় বর্ণমালাসমেত । এই বর্ণমালা- অগণিত মানুষের । এবং মানুষের মনুষ্যত্বের যাবতীয় পুঁজি । ভাষার প্রশ্নে সুগন্ধী গোলাপ ও জলন্ত মশাল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া । প্রেমিক ও প্রতিবাদীর ভূমিকায় অন্তর্নিহিত ভাষা, অনুশীলন ও অর্জনের দৃপ্ত সংস্কারে । বরাক উপত্যকার
ভাষাশহিদের স্মৃতিতে মাতৃভাষার পতাকা হাতে যারা এগিয়ে চলেছি, আমাদের বিশ্বাস, একদিন নবপুরাণ লেখা হবেই । আমাদের রয়েছে অখণ্ড, অবিভাজ্য এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার । প্রণাম ভাষা-জননীরে । গাই ভাষাশহিদের গান । জয়গান । আমরা সবাই জানি, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না ।
আত্মপরিচয়ের বর্ণমালা
কেন কেবলই ভয়, অনিশ্চয়তা
স্বদেশের মানচিত্রে এ কোন বিপন্ন ভূগোল
এখানে ওঠে প্রতিদিন নতুন সূর্য
অন্তর্গত চেতনায় ভাষা শহিদের দেশে
ফুলেরাও কাঁদে, জ্বলে ওঠে কবিতা
বঙ্কিম,রবীন্দ্রনাথ,নজরুল, জসিম, জীবনানন্দের ভাষা
শরবিদ্ধ বর্ণমালা । মেঘমালা, এ আলোর লন্ঠন
হাজার হাজার তার আয়ুষ্কাল, অগণিত কর্মশালা
উনিশে মে সুরমা বরাকের জারি জারি ভাটিয়ালি
চড়কের লোককথা । হাতে হাতে জ্বলছে মশাল
মায়ের বুকে বহ্নিমান সন্তানের চিতা
যুদ্ধে আর রক্তের নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে
ভেসে যায় অমর উনিশের ভেলা
অশ্রু আর আগুনের সহজপাঠ
কোথায় কোথায় বাঁক নেবে
আর কত লোকক্ষয়
মায়ের তপ্ত বুকে গড়িয়ে পড়ে
বর্ণমালার অশ্রুজল
আত্মপরিচয় ।
নব পুরাণ কথা
একটা দেশের মানুষ ভাষার জন্য কাঁদে
গুন গুন সারে পাগলা ভ্রমর
এখানে বকুলের মালা নেই
পদ্মাপুরাণ পড়ে লৌকিক পৃথিবী
লৌহবাসর হাসে অট্টহাস্য
টুটা ফাটা মানুষ জাগরণ চায়, যুদ্ধ নয়
মাতৃভাষায় কথা বলে পৃথিবী।
যেসব গান প্রত্যেক মানুষের বুকে থাকে
যে পংক্তিগুলি নাম আলো করে দেবে
নিবিড় করে জন্ম নেয় নতুন দিনগুলি
স্বপ্ন-ভ্রূণ, সরোবরে পদ্ম, ভ্রমর । প্রত্ন-তত্ত্বচিহ্ন
পবিত্র মেঘ, ভাঙা মানুষ,
চাঁদ ওঠে না । দুয়ার ভরা কোলাহল
কদমফুল ফুটে রয়েছে ।
পৃথিবীর মাতৃভাষা
পদাতিকের ধুলি অঙ্গে এগিয়ে যায় মিছিল
শহিদ তোমরা অমর রহো...
মহামানবের আত্মবলিদান বৃথা যায় না ... ...
ধ্বনিত হয়
জান দেব, তবু জবান দেব না
মাতৃভাষা জিন্দাবাদ
মিছিল মিছিল মিছিলের ধুলো
ভাষার জন্য একটি উপত্যকা কাঁদে
ভালবাসার জন্য
বরাক কুশিয়ারা বুড়িগঙ্গা
কাঁদে ভীষণভাবে
কাঁদে বঙ্গভূমি, জননী জাহ্নবী
কাঁদে শস্যশ্যামলা বসুন্ধরা
সুরমা কুশিয়ারা মিশে যায় বঙ্গোপসাগরে
গঙ্গা ছুটে চলেছে
বরাকে ধামাইল চড়কের নাচ
জারি সারি ভাটিয়ালি উনিশে মে-র আত্মগাথা জলের বুকে
১৯শে মে নদীর মধুর চলা
ঝরণা যেমন গান গায়
জেলেদের ডিঙ্গি নৌকা
গুনগুন করে গান গাওয়া
বর্ণমালা
মাতৃভাষার গান
১৯শে মে, ২১শে জুলাইর আত্মকথায়
উপকথা বলছে পৃথিবী
শিউলিফুলে ভরে আছে গাছতলা
ফুল কুড়ায় গুন গুন স্বরে মানুশেরা, জন্মে শালুক
বিলে শাপলাশালুক আর সূর্য ওঠা দেখো
যেন গঙ্গোত্রী থেকে আরও দূরে
গঙ্গার উৎস এক আশ্চর্য হিমবাহ
গোমুখ, এখানে থাকা যায় না
তুষারশৃঙ্গগুলি থেকে গড়িয়ে পড়ছে সঙ্গীত
নিরুদ্দেশে আলোর আভাস
চাঁদের আলোয় পথ ফুরোয় না
মাতৃভাষার বন্দনায় পদাবলীর মত
বিলজুড়ে ফুটে আছে অসংখ্য পদ্ম
অপূর্ব রূপ গন্ধ
এর পাশে সূর্যোদয় সবচেয়ে সুন্দর !
সূর্য না ওঠা পর্যন্ত রঙের এই হোলি খেলা
এ দিনও না রাতও না
দিন রাত্তিরের মোহনা
বিলে পদ্মফুল আর সূর্য ওঠা দেখো
পৃথিবীর মাতৃভাষা
জ্যোৎস্না ধুইয়ে যায় সারা উপত্যকা
ফুলেরাও তাই তোমাকে ভালবাসে
নদীরা বড় কাঁদে
শহিদ মায়ের মত
সমুদ্রের মত নিজস্ব গান
নদীর মত গান
অন্তর্গত ভাষায় আগুনের সহজপাঠে
সুলুকসন্ধান জানে যে
জানে বরাভয় কাকে বলে
নবতর জন্মের খোঁজে
যে লেখে ভাষার পদাবলী
যাদের ভেতরে অন্য স্রোত, অন্য গতিপথ
অঙ্গীকারের আলো জ্বালায় কারা
বাতাসে কীসের আহ্বান
সমুদ্রে জেগে থাকে যেভাবে বাতিঘর
এ নদীর চলা মোহনায়
জল ঠিক পথ খুঁজে নেয়
ওই সাগরের নীল... ...
ভেসে আসে সাগরের গান
চারনেরা ধরেছে গান
বরাকের বুকে ভাটিয়ালি গান, রক্তলেখা
প্রাগৈতিহাসিক যুগের উপকথা
বাংলা ভাষা জিন্দাবাদ । জিন্দাবাদ
এ কোন বরাক ? ভাষা শহিদের গাও জয়গান
মাতৃভাষার বন্দনায় হেঁটে যায় পৃথিবী
সজারুর মত বেঁচে থাকে কবিরা
দু’হাত তুলে সামনে দাঁড়াও
জানায়, নিয়তির মত জল্লাদ
নদীতে বহমান স্রোত । ভাগ্যবিধাতা কারা ?
কোথাও রয়েছে ক্ষমা, ললিত কুঠুরি
স্বজনের ভালভাসাহীনতার পাপ
স্তোকবাক্য ।
সহজপাঠে এভাবেই সফলতা ব্যর্থতার কাঁধে মাথা রাখে।
যাদের ভেতরে অন্য স্রোত, অন্য গতিপথ
এসো, অন্ধকার ভেঙে পণ্য নিয়ে যাই
স্রোতের বিরুদ্ধে যে দাঁড় টানে
তার হাতে শক্ত হাল
জানে কোথায় গুপ্তচড়া
তবু তরী টাল খায়
কত ঢেউ যে বয়ে গেল
নদীর বুকে যে বেড়ায় টের পায়
তার শরীরের ফাঁকে ফাঁকে হাওয়ার শব্দ
দিনবদলের বিশ্বাসে মাতৃভাষার লাবণ্যে
হারিয়ে যাওয়া ভালবাসার এক নদী নিভৃতে ঘরে ঢোকে
গাঁয়ের উঠোনে উলঙ্গ শিশু, কৃষক রমণী । ধানের শিষে আলো
ভাষার শরীরে গর্ভিণী জুমধান- ভাসান
বরাকের পদাবলী লেখে চারণেরা
প্রাণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখার উপায় নেই
জীবন আর শপথের জীবাশ্ম দেখে প্রত্নতাত্ত্বিক
মানুষের কাছে
প্রাণের সহযোগে কোনও কিছু উজ্জ্বল করে রাখে
সঙ্গীত, ভাষা, কাব্যকলা।
সময়ের পথে পথে মানুষকে নিয়ে হাঁটে
পুরাকীর্তি, স্থাপত্য- ভাস্করজ,স্স্মৃতিস্তম্ভ, গম্বুজ-খিলান
ভোরের নদীতে সূর্যোদয় দেখে
যেমন চোখ মেলে চায় অসংখ্য ধানেরফুল কচুরীপানা ধনচে গাছ
জীবনের পরমায়ু জুড়ে ষড়ঋতুর সমাহারা
মণিমাণিক্যের পাথুরে খনি ভাষার পালতোলা নাও ।
ভালবাসার লাবণ্য
আলোর পথ পেয়ে ঠিকানা খুঁজে নেওয়া
মানবের ভেতরে ছাপোষা ঈশ্বর
যুদ্ধের ক্লান্তির শেষে বোঝা যাবে দুরন্ত লোকক্ষয়
অব্যক্ত রৌদ্রের মত আম-জাম-জামরুলের শিমুলের ফুটে ওঠা
উপকণ্ঠ শিলচর
সহসা কোকিল ডেকে ওঠে
আগুনলাগা কৃষ্ণচূড়া বন
সম্বৎসর সজাগ শহিদবেদি প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতি
রৌদ্র কুড়ায় গুন গুন পাগলা ভ্রমর
জগৎজোড়া মতিভ্রমে
অরূপ বাঁশি লুটিয়ে কাঁদে
কীসের জন্য ?
শূন্য হাতে যে করে ঘর, অসীম করে তারই সন্ধান ।
প্রজাপতির মত জ্বলজ্বল করে দূরান্তের নক্ষত্ররা
প্রণয়ের মজবুত বাঁধ ভালবাসা ছাড়া কেউ বোঝে না
বনানীর তন্ময়তা
জানে সালোক সংশ্লেষণ
দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত অমৃতস্য পুত্রা
বোঁটা থেকে খসে পড়বে বলেই
সুসময়ে পেকে যাওয়া ফসলের অঘ্রাণ
তোমাকে নিয়েও পরিভ্রমণে মাতৃভাষার সবুজেভরা পৃথিবী
আমার কুশিয়ারা কলংমার কূলে হাজির অশ্বমেধের ঘোড়া
জাহ্নবীর আনাগোনা
আগামী পৃথিবীর গান ।
মাতৃভাষা
এমন সময় কেমন আছে সে
যে আমাকে বাউল বানিয়েছে-
মায়ের কথায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়
বাঁধা নৌকা ছুটে যায়
নদীর উচ্ছাসে হয় শ্রুত
ঊনিশ আর একুশের রক্ত গান গেয়ে ওঠে ।
একুশের কথা বলছে ওই ভোরের শিশির
ঊনিশের কথা বলছে ভোরের আকাশ,বাতাস,সবিতা ।
No comments:
Post a Comment